গর্ভাবস্থায় নতুন ঝুঁকি.

Ectopic Pregnancy এর লক্ষণ ও প্রতিকার
Noto Serif Bengali Font
সন্তান জন্মদান একজন নারীর কাছে সব থেকে অানন্দের বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। বলা হয়ে থাকে সন্তান জন্মদানের মাধ্যমেই নাকি নারী সত্ত্বা পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। তবে ইদানিং কালে গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন গর্ভবতী মহিলারা।আর দিনকে দিন এর হার বেড়েই চলছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এলো একটি নতুন মাতৃত্বকালীন জটিলতার কথা সেটি হচ্ছে Ectopic pregnancy. চলুন জেনেই এর সম্পর্কে কিছু তথ্য।
Ectopic pregnancy সংগঠিত হয় যখন একটি নিষক্ত ডিম্বানু গর্ভাশয়ের বাইরে অথবা জরায়ুজ গাত্রের বাইরে প্রথিত হয়।চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ectopic বলতে বুঝানো হয় নিষিদ্ধ বা ভুল জায়গায় অবস্থান। অর্থাৎ wrong place or position. প্রায় ৯০ শতাংশ ectopic গর্ভাবস্থায় নিষিক্ত ডিম্বানুগুলো মায়ের ডিম্বাশয় ও জরাযুর সাথে সম্পর্কিত ফ্যালোপিয়ন নালিকায় প্রথিত হয়। তাই অনেকেই একে tubal pregnancy বলে থাকেন। তবে অনেক বিরলতম ঘটনায় দেখা যায় নিষিক্ত ডিম্বানুগুলো মায়ের সার্ভিক্স (cervix) এও অবস্থান করতে পারে।আবার এটি সরাসরি মায়ের ডিম্বাশয় অথবা সার্ভিক্স এমনিকি উদর প্রাচীরেও যুক্ত হতে পারে।
এর সঙ্গে তিনি জানান, বর্তমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি তিনজন গর্ভবতী মহিলার মধ্যে একজন ectopic pregnancy এর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।যেটা হয়ত অনেকেরই চিন্তার বাইরে। সত্যিকার অর্থেই তাই আমাদের সচেতন হতে হবে আজ থেকেই। তাই চলুন জেনে নেই ectopic pregnancy এর উপসর্গ গুলো কি হতে পারে? উপসর্গঃ ectopic pregnancy এর ক্ষেত্রে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভবতী মহিলারা যোনিপথে রক্ত এবং দেহের বিশেষ একদিকে তলপেট ও পেলভিসে (শ্রোণীচক্র) ব্যাথা অনুভব করেন। অনেকেই আবার ঘাড়ে বা পিঠের নিন্মাংশে ব্যাথা অনুভব করেন। আর রক্তপাতে ফলে মাথা ঘুড়া ও অনেকেই ঘন ঘন অজ্ঞান হতে পারেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ফ্যালোপিয়ন টিউব (গর্ভনালী) বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না । জেনিফার জানান এই লক্ষণ গুলো রজঃস্রাব বন্ধের ৬ – ১০ সপ্তাহ পরেই দেখা যায়। রিস্ক ফ্যাক্টরঃ নিন্মক্তো গর্ভবতী মহিলাদের ectopic pregnancy এর সম্ভবনা সব থেকে বেশী
১. যাদের পূর্বে ectopic pregnancy হয়েছিল।
২. যাদের পূর্বে বন্ধ্যাত্ব জনিত সমস্যা ছিল।
৩. যাদের যৌনব্যাধি যেমন গনোরিয়া বা chlamydia ছিল বা আছে।
৪. যাদের শ্রোণী প্রদাহী কোন সংক্রামক ব্যাধী রয়েছে যেটি ফ্যালোপিয়ন নালী,জরায়ু অথবা শ্রোণীচক্রের অন্য কোন অংশের ক্ষতি সাধন করতে পারে।
৫. যাদের endometriosis রয়েছে।
৬. যাদের পূর্বে এপেন্ডিক্স অথবা পেলভিসের অন্য কোন সার্জারি রয়েছে।
৭. যারা Intrauterine device (IUD) ব্যবহার সত্ত্বেও গর্ভধারণ করেন।
৮. যারা গর্ভবতী হওয়ার আগে ধূমপায়ী ছিলেন।
৯. যাদের বহু যৌন সঙ্গী রয়েছে কারন এর ফলে পেলভিক ইনফেকশনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
কারনঃ ectopic pregnancy মূলত একজন গর্ভবতী মহিলার পূর্বে ঘটিত কোন রোগ এবং তার জীবনযাপন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। এটা কোন জীনগত সমস্যা নয় তাই বংশানুক্রমিক ভাবে হওয়ার কোন কারন নেই। উপরে বর্ণিত কারন গুলো যেগুলো আসলে ফ্যালোপিয়ন নালিকা বা শ্রোণীচক্রে ইনফেকশন ঘটাতে পারে সেটিই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ectopic pregnancy এর জন্য দায়ী। বিশেষকরে ধূমপান বা মদ্যপান জনিত কারনে এরকম হওয়ার সম্ভবনা প্রায় ৮০ শতাংশ বলে জানান স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা।
রোগ নির্ণয় ও পরীক্ষা (Diagnosis and tests) যে সকল মহিলা গর্ভাবস্থায় যোনিপথে রক্তপাত ও শ্রোণীচক্র জনিত ব্যাথা অনুভব করেন তাদের রক্তের human chorionic gonadotropin (hCG) হরমোনের পরীক্ষা করা হয়। এটি এমন একটি হরমোন যা কেবল গর্ভবস্থায় রক্তে উপস্থিত থাকে। তবে বাড়িতেও (HCG) নির্ণয় করা যায় তবে এটি মুত্রের গোনাডোট্রোপিন নির্ণয় করে কিন্তু ectopic pregnancy এর ক্ষেত্রে এটি যথেষ্ট নয়।
কারন যোনিপথে রক্তপাত ও শ্রোণীচক্র জনিত ব্যাথা অন্য যে কোন কারনেই গর্ভাবস্থায় হতে পারে এজন্য রক্তে উপস্থিত গোনাডোট্রোপিনের (HCG) এর মাত্রা নির্ণয় করা হয়। স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে HCG এর মাত্রা মোটামুটি দ্বিগুণ হয়ে যায় কিন্তু ectopic এর ক্ষেত্রে এটি অনেক ধীর গতিসম্পন্ন হয়। এছাড়াও HCG লেভেল মাপার পাশাপাশি অারো একটি টেস্ট করানো হয় সেটি হচ্ছে transvaginal ultrasound। এটি করতে একটি সরু লম্বা দন্ডাকৃতির যন্ত্র গর্ভবতী মহিলার যোনিতে স্থাপন করা হয় যা জননেন্দ্রিয় যেমন জরায়ু,ডিম্বাশয়,সারভিক্স এবং ফ্যালোপিয়ন নালিকার পরীক্ষা করে। এক্ষেত্রে হাই-ফ্রিকোয়েন্সির অাল্ট্রাসাউন্ড ওয়েভ ব্যবহার করে দেখা হয় ভ্রুনের অবস্থান ঠিক কোথায় গর্ভাশয়ে নাকি গর্ভাশয়েরর বাইরে। তবে অনেক সময় transvaginal ultrasound এর মাধ্যমেও এটি জানা সম্ভব হয়ে উঠে না সেক্ষেত্রে রক্তে HCG এর মাত্রা 1,500 থেকে 2,000 mIU/mL মাঝে থাকলে ectopic pregnancy বলে অাশঙ্কা করা হয়। জেনিফার বলেন, “অনেক সময়ই মহিলারা ectopic pregnancy এর কথা জানার পর আমাদের জিঙ্গেস করেন ভ্রুনটিকি গর্ভাশয়ে স্থানান্তর করা সম্ভব? তখন আমাকে অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় মেডিকেল প্রযুক্তিতে এখনও এটি উদ্ভাবিত হয় নি। ” তবে জেনিফার অাশার কথাও জানান ectopic নিয়ে বর্তমানে অনেক গবেষণা চলছে হয়ত খুব শিঘ্রই চিকিৎসা বিজ্ঞান এর সমাধান দিতে পারবে।
মাতৃত্বকালীন ঝুঁকিঃ ectopic pregnancy এক জন গর্ভবতী মহিলার জন্য বিভিন্ন ধরনের স্ত্রীরোগ ঘটাতে পারে সেই সাথে তার মৃত্যুও ঘটতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে মাতৃত্বকালীণ সময়ে প্রথম তিনমাসে প্রতি ১০ জন মহিলার মাঝে ৪ জন মারা যান ectopic pregnancy বা মাতৃত্বকালীন না না জটিলতায়। আর এই ectopic pregnancy মূলত প্রথম তিন মাসের মধ্যেই সংগঠিত হয়।বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পূর্বে যারা এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল তাদের ঝুঁকি একটু বেশী থাকে তবে আশার কথা হচ্ছে পরে অনেকেই স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চা জন্মদান করতে পারে।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগঃ যেসকল গর্ভবতী মহিলার মাঝে সামন্যতম লক্ষন প্রকাশ পায় এবং যাদের ফ্যালোপিয়ন নালিকা ফেটে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটার কোন ঝুঁকি নেই তাদের সামন্যতম ওষুধ প্রয়োগেই তারা সুস্থ হয়ে উঠেন। তাদের ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত মিথোট্রেক্সেট (methotrexate) নামক ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। যা ভ্রুণটিকে বেড়ে উঠতে বাধাদান করে। এফলে ফ্যালোপিয়ন নালীর কোনরূপ ক্ষতি সাধান ছাড়াই ভ্রুণটিকে অপসারণ করা যায়। মিথোট্রেক্সেট একবার প্রদানের পর চারদিন অথবা সাতদিনের মাথায় পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করে দেখা হয় এই সময়ের মধ্যে তার HCG এর মাত্রা ১৫% এর নিচে নেমেছে কিনা। যদি না নেমে থাকে তবে পুনরায় দ্বিতীয় ইনজেকশন প্রদান করা হয়। এভাবে human chorionic gonadotropin (hCG) এর মাত্রা শূন্যে না নামা পর্যন্ত চিকিৎসা চলতে থাকে। তবে সব ক্ষেত্রেই শুধু মাত্র ওষুধের মাধ্যমে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হয় না মাঝে মধ্যে ছোট খাটো অস্ত্রপাচার করতে হয় ল্যাপ্রোস্ককোপির মাধ্যমে অনেক সময় সমগ্র ফ্যালোপিয়ন লালিকাটিকে সরিয়ে দিতে হয়।আর এই ছোটখাট সার্জারির জন্য রোগী চাইলে হাসপাতালে অবস্থান না করেও খুব অল্প সময়ে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
তবে অনেক সময় খুব বড় ধরনের সার্জারির প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে উদর অর্থাৎ তলপেটে ব্যাপক কাটাঁ ছেড়া করতে হয়। অনেক সময় ফ্যালোপিয়ন নালিকা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হলে কেঁটে বাদ দিতে হয় আবার অনেক সময় ফ্যালোপিয়ন টিউবে সার্জারি করে রিপেয়ার করতে হয়।
তবে জমজ সন্তানের ক্ষেত্রে ectopic pregnancy সমস্যার সমাধান করা ওষুধের মাধ্যমে করা খুব কঠিন হয়ে পরে সেক্ষেত্রে সার্জারি মাধ্যমে গর্ভাশয়ের বাইরের ভ্রুণটিকে নষ্টকরে ফেলা হয়। তবে এই সার্জারির ফলে অন্য সন্তানটির জীবিত জন্মগ্রহণ করা খুব বিরলতম ঘটনা। সাধারনত যারা Ectopic pregnancy সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন তাদের পুনরায় সন্তান গ্রহনের জন্য কমপক্ষে তিন মাসের মত অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়াও Ectopic pregnancy অার্লি প্রেগন্যেন্জি লসের মত একটি ঘটনা এক্ষেত্রে একজন নারীকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে ব্যাপক সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। তবে সবথেকে ভাল হয় পরিপূর্ণ ভাবে সুস্থহয়ে পুনরায় সন্তান গ্রহন করা এক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন অনেক ঝুঁকি থেকে শঙ্কামুক্ত থাকা যায়। সর্বপরি নারীকে সম্পূর্ণা করতে যতটা মাতৃত্ব ভুমিকা পালন করে থাকে ঠিক তেমনই মাতৃত্ব কালিন সময়টিতে একজন নারীকে বিভিন্ন প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয় ঠিক তেমনই একটি প্রতিকুলতার নাম Ectopic pregnancy।
তবে একটু সচেতন ও নিয়মানুবর্তী জীবন যাপনই হতে পারে এই প্রতিকুলতা থেকে অনেকাংশেই মুক্ত রাখবার একটি উপায় । আর সচেতন হতে হবে নিজের ঘর তথা পরিবার থেকেই তাই আসুন নিজে সচেতন থাকি অপরকে সচেতন রাখি এবং মাতৃত্বকালীন ঝুঁকি গুলো থেকে নিজেকে মুক্ত রাখি।

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.